ইয়াবায় ভাগ্য পরিবর্তন আলাউদ্দিনের!

বিশেষ প্রতিবেদক •

 

মাদকের বিরুদ্ধে ঘোষিত আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর অভিযানে অনেক ইয়াবা কারবারি গ্রেফতার হলেও আইনের আওতায় আসেনি অনেকে। ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে আধিপত্য বিস্তার করে চলেছেন অনেক ইয়াবা ।

তাই উখিয়ায় গোয়েন্দা সংস্থার তালিকার বাইরেও রয়ে গেছে বহু মাদক কারবারি। তারা কতিপয় অসৎ কর্মকর্তাদের মাসোহারা দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের অবৈধ কারবার। এমনটাই অভিযোগ করেছে স্থানীয়দের।

জানা যায়, উখিয়ার হলদিয়াপালং ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের রুমখাঁ মৌলভী পাড়া এলাকার আমির হোসেনের ছেলে আলাউদ্দিন একজন ইয়াবা কারবারি হিসেবে পরিচিতি পেলেও তিনি বরাবরই অধরা রয়ে গেছেন।

ইয়াবায় ভাগ্য পরিবর্তন করেছেন নিজের ও পরিবারের সদস্যদের। অথচ কয়েক বছর আগেও ছিলোনা কিছু।
পড়ালেখা করার জন্য মাদ্রাসায় ভর্তি হলেও পরিবারের অভাবের কারণে ইবতেদিয়ার গন্ডি পেরুতে না পেরে নেমে যান কাজে। ধার করে খুলেন পানের দোকান। কিন্তু এসবে চলছিল না তার পরিবার। তাই যুক্ত হন মরণনেশা ইয়াবার সঙ্গে। প্রথমে পানের দোকানের আড়ালে খুচরা কারবার শুরু করেন। পরে খুচরা ইয়াবা বিক্রিতে লাভ দেখে সাহস বাড়ে তার। তাই নেমে পড়েন বৃহৎ চালানে।

এদিকে তালিকার শীর্ষে থাকা অনেক ইয়াবা ডন গ্রেপ্তারের পরও নিজের অবস্থান টিকিয়ে সারাদেশে ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন এই যুবক। যার ফলে দিন দিন আরো বেপরোয়া হয়ে প্রকাশ্যে পাচার করছে কাড়িকাড়ি ইয়াবা। ধ্বংস হচ্ছে দেশ তথা দেশের যুব ও ছাত্রসমাজ। ইয়াবা পাচার করতে গিয়ে তার অনেক সহযোগী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হয়ে জেল কাটছেন। অথচ অদৃশ্য কারণে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে গেছে আলাউদ্দিন।

মাত্র দুই বছরে মাদক বেচাকেনা করে আমূল বদলে গেছেন তিনি। বর্তমানে সুপারি বাগানসহ বসত ভিটা কিনে গড়ে তুলছেন আলিশান বাড়ি। অথচ আগের থাকার জায়গাটা ছিলো জরাজীর্ণ। এছাড়াও তার নামে-বেনামে রয়েছে অনেক সম্পদ।

মাদক কারবারিদের তালিকায় নাম থাকা এ যুবককে এলাকায় চেনে ‘ইয়াবা আলাউদ্দিন’ নামে।

আলাউদ্দিন একা নন, মাদকের সঙ্গে সখ্যতা তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও। অথচ ২ বছর আগেও থাকতেন জরাজীর্ণ ঘরে। পরিবার ছিল অসচ্চল। বাবা সংসারের খরচ জোগাড়ে করতেন সুপারী ব্যবসা। মাদক কারবারে জড়িত অনেক কারবারির সাথে তার আগে থেকেই ছিল হাত। তাই এই ভয়ংকর এই কারবারে নামতে তাকে পিছন ফেরে তাকাতে হয়নি। এইছাড়া বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের ঢল নামার কারণে ইয়াবা আরও সহজলভ্য হয়ে যায়। তাই রোহিঙ্গাদের যোগসাজশে মায়ানমানের সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে কম দামে ইয়াবা এনে মজুদ করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করে। ইয়াবা কারবারের খাতিরে রোহিঙ্গা শিবিরে রয়েছে তার শক্তিশালী নেটওয়ার্ক।

এদিকে আলাউদ্দিনের নেটওয়ার্ক বিশাল হওয়ায় সে বারংবার আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার চোখ ফাঁকি দিয়ে তার অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে মতে, আলাউদ্দিন সম্প্রতি বিলাশবহুল বাড়ি বানাচ্ছেন। অবৈধ ব্যবসা ছাড়া একটি ছোট পানের দোকান থেকে জায়গা কিনে বাড়ি কেনা কখনোই সম্ভব না।

সূত্রমতে, ইয়াবা আলাউদ্দিনের নেতৃত্বে পুরো জেলায় বিভিন্ন সিন্ডিকেট মোটা দাগের ইয়াবা লেনদেন ও পাচার কাজে লিপ্ত রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে এ কাজে পারদর্শী বিত্তহীন থেকে কোটিপতি হওয়া উক্ত আলাউদ্দিন নিজেকে একজন পরিশ্রমী ব্যবসায়ী বলতে ব্যস্ত।

এলাকাবাসী আরো জানায়, হলদিয়ার অপরাধজগতের অন্যতম ইয়াবা ব্যবসায়ী আলাউদ্দিনকে গ্রেপ্তারে বেরিয়ে আসবে ইয়াবা পাচারসহ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।

মৌলভীপাড়া এলাকার নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক এক যুবক জানান, আলাউদ্দিন ও তার ভাইয়েরা প্রকৃত ইয়াবা কারবারি তা এলাকার মানুষ অবগত রয়েছে। তাছাড়া স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের করা মাদক কারবারিদের তালিকায় রানা শীর্ষে রয়েছে।

স্থানীয় সচেতন মহলরা বলেন, ইয়াবা শাহাজালালদের মতো জঘন্য মাদক ব্যবসায়ীদেরকে গ্রেপ্তার পূর্বক কঠিন শাস্তির আওতায় নিয়ে আসার জন্য ও তাদের যারা রক্ষাকর্তা আছে তাদের আইনের আওতায় আনতে এবং সেই সাথে তাদের অবৈধ পথে অর্জনকৃত সম্পদ ও আয়ের অনুসন্ধান করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

এদিকে আলাউদ্দিন বলেন, নিউজ করে কেউ আমার কিছু করতে পারবেনা। অনেক বড় বড় সাংবাদিক ও অনেক কর্মকর্তাদের সাথে আমার পরিচয়।

উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ আহমেদ সঞ্জুর মোরশেদ বলেন, মাদক কারবারিদের কোন ছাড় নাই।পালিয়ে কেউ বেশিদিন বাঁচতে পারে না।পুলিশ ঠিকে খোঁজে বের করে আইনের মুখামুখি করবে। তালিকা থেকে বাদ পড়া মানে বেঁচে যাওয়া নয়। কারবারিরা যতো বড় মাপের হোক তাদের বিরুদ্ধো কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।